রংপুরের পীরগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। একদিকে নানা অনিয়ম দূর্নীতি করে প্রতিষ্ঠানটি নিজের সম্পদ মনে করে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের পছন্দমতো। বিভিন্ন ট্রেডে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মহিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি অধ্যক্ষ নয়, অধ্যক্ষের স্ত্রী নাসরিন পান্না'র হস্তক্ষেপেই পরিচালিত হয়। তার কথার বাহিরে গেলেই বিপদ খন্ডকালীন প্রশিক্ষকদের। তাই অধ্যক্ষের স্ত্রীকে খুশি করেই কাজ করতে হয় তাদের। শুরু থেকেই ওই প্রতিষ্ঠানটিতে ২ বছরের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দূর্নীতি অব্যবস্থাপনা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন পান্না পুরো প্রতিষ্ঠানটির দেখভাল নয়, চলে তারই ইশারায়। অভিযোগ রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বহিরাগতদের নিয়ে গান আড্ডাও মেতে থাকেন অধ্যক্ষের স্ত্রী । তার স্ত্রীর নেতৃত্বে প্রশিক্ষকদের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক বাহিনী । এসব বাহিনীর অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেই বিপাকে পড়েছেন সুলতান নামের এক প্রশিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ করায় অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রী পান্নার গড়ানো বাহিনীর সদস্যদের অভিযোগকারী বানিয়ে তাকেও প্রতিষ্ঠান ছাড়ার ভয় দেখিয়ে যাচ্ছেন ।
প্রতিষ্ঠানটিতে অধক্ষ্যের অনিয়মই যখন নিয়ম। অধ্যক্ষ ও তার পত্নীর সেচ্ছাচারিতার ফলেই প্রতিষ্ঠানটিতে যে কয়টি ট্রেড চালু রয়েছে তার কোনো ট্রেডই দক্ষ প্রশিক্ষক নেই বললেই চলে। যেকজন রয়েছে তাদের কারো নেই শিক্ষাগত যোগ্যতা আবার, কারো নেই অভিজ্ঞতা, মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষক মান্নান অষ্টম শ্রেণি পাশ তারপরও অদৃশ্যের শক্তির বলে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, খন্ডকালীন প্রশিক্ষক সোহাগ, জুয়েল, নাজমুল, সাকিব এদের প্রশিক্ষক হবার যোগ্যতা না থাকা স্বত্তেও তারাই প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষক। তাদের কারোরই লেভেল ২ মিনিমাম বা ডিপ্লোমা সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও তা কারোরই নেই । অদক্ষ প্রশিক্ষকদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় ভেঙে পড়ছে দক্ষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ।
রংপুরের পীরগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মহিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে । প্রতিষ্ঠানটি অধ্যক্ষ নয় পরিচালিত হয় স্ত্রী নাসরিন পান্নার ইশারায়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে স্বজন প্রীতি ও প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ করলেই করা হয় চাকুরীচ্যুত নিয়োগে নিয়ে থাকেন মোটা অংকের টাকা সন্তুষ্টি করতে না পারলে হয়না নিয়োগ।
যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বেশকজন প্রশিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে অধ্যক্ষ । এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন সুলতান নামের এক প্রশিক্ষক এবিষয়ে প্রথমে ক্যামেরার সামনে কথা বললে আরো সমস্যা হবে আর এমনিতেই সমস্যা আছি বলেও জানান তিনি । অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানটিতে একক অধিপত্য বিস্তারে গড়ে তুলেছেন এক বাহিনী । বাহিনীদের সাজানো মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর অভিযোগও রয়েছে এক ভুক্তভোগী প্রশিক্ষককে । পীরগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রংপুরের অধ্যক্ষ ( ভারপ্রাপ্ত) মো: মহিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তা হলো।অ্যাসেট প্রকল্পের সকল মালামাল ক্রয় কমিটি ব্যতিরেকে নিজেই ক্রয় করেন । এখানে ক্রয় কমিটি থাকলেও তাদের কে দিয়ে কোন ধরনের মালামাল ক্রয় করেন অধ্যক্ষ । প্রশিক্ষনার্থীদের ৬টি করে সিবিএলএম (বই) দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ০১ টি করে সিবিএলএম (বই) দেওয়া হয় ।০১ টিসিবিএলএম (বই)বাবদ ব্যয় হয় ৫০/-টাকা আর বিল করা হয় ২৫০ টাকা । এছাড়াও প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য যে ব্যাগ ক্রয় করা হয় ৩৫০ টাকা আর বিল করা হয় ৯৬০ টাকা । ৭৬,২৫০ টাকা করে প্রতি ব্যাচে আত্বসাৎ করেন তিনি। ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডের প্রশিক্ষন কাজের জন্য ব্যবহৃত ফ্রিজ তিনি তাঁর বাসায় ব্যবহার করছেন । এছাড়াও তাঁর কোয়াটারে কোন এসি বরাদ্দ না থাকলেও তিনি রেস্ট হাউজের এসি খুলে নিয়ে তাঁর রুমে ব্যবহার করছেন। এছাড়াও তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের ভিউ বাড়ানোর জন্য ক্লাশ শেষে প্রতিদিন ৩.০০- বিকেল ৫ টা পর্যন্ত গ্রাফিক্স ট্রেডের টিচার্চ কে দিয়ে সকল কম্পিউটার চালু রাখা হয় এবং তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের গান বাজানোর ফলে সরকারের অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ খরচ করেন। এছাড়াও অধ্যক্ষ এ্যাসেট প্রকল্পের ১ম ও ২য় ব্যাচের ইন্ড্রাট্রি ভিজিটে প্রতি ট্রেডে ৭,০০০/-টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও তিনি ভিজিটে কোন প্রশিক্ষণার্থীদের কোন নাস্তা খাওয়া নি এবং তাদের যাতায়াত ভাড়া পর্যন্ত দেয়নি । যাহা ক্রয় কমিটির কেউ অবগত নয় ।
প্রতি ব্যাচে অ্যাসেট প্রকল্পের চারটি ট্রেডের ৭,০০০/-করে মোট ২৮,০০০-টাকা ভূয়া বিলের মাধ্যমে আত্বসাৎ করেছেন । ৫ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২৪ ইং সেশনে দুই মাস মেয়াদী স্ব-নির্ভর মোটর ড্রাইভিং কোর্সে ভর্তির সময় অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো: মহিবুল ইসলাম সবার কাছে থেকে ৫,১০০/- টাকা করে ভর্তি ফি নিয়েছেন,যাহা বিএমইটির নীতিমালায় ২১০০/-টাকা থাকলেও আছে । প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর কাছে থেকে ৫,১০০ টাকা করে নিয়েছেন। স্ব -নির্ভর মোটর ড্রাইভিং কোর্সে টিটিসিতে অ্যাসেট কোর্সে নিয়োজিত শিক্ষক কে দিয়ে আবার দুই মাস মেয়াদী স্ব-নির্ভর মোটর ড্রাইভিং কোর্স পরিচালনা করিয়েছেন যাহা সম্পুর্ন অনৈতিক। একটি কোর্সের শিক্ষক কে দিয়ে তিনি আবার অন্য আরেকটি লাভজনক স্ব নির্ভর কোর্সের শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিক করেছেন যাহা সম্পুর্ন বে -আইনী ।
এছাড়াও গঙ্গাচড়া টিটিসিতে (রংপুর) পূর্বের কর্মস্থলে থাকাকালীন সময়ে বিদেশগামী কর্মীদের (০৩) দিনের পিডিও সার্টিফিকেট টাকার বিনিময়ে (প্রতি সার্টিফিকেট ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা ভূয়া সার্টিফিকেট প্রদান করেন । বনে গেছেন অঢেল টাকার মালিক। ওই অধ্যক্ষের নামে প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক মন্ত্রনালয় কর্তৃক বিভাগীয় মামলাও চলমান রয়েছে বলেও জানা যায় । ভর্তি পরীক্ষায় একক ক্ষমতা বলে সোর্স এর মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে ভর্তি করান প্রশিক্ষণার্থীদের । মোটর ড্রাইভিং কোর্সে তিন মাসে মোট তৈল খরচ করা হয় ৩০,০০০ টাকা । আর অতিরিক্ত ভূয়া বিল করা হয় প্রায় ৬০,০০০ টাকা।পরিবহন পুল থেকে ০২ টি গাড়ী প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য (ব্যবহারিকের কাজের জন্য)ব্যবহার করার কথা বলা হলেও একটি হাইস গাড়ী তিনি তার স্ত্রী এবং তার স্ত্রীর বন্ধু বান্ধব কে নিয়ে ০৫ ই আগষ্ট সরকার পতনের আগে প্রতিনিয়ই নিজের গাড়ী মনে করে ঘুরতেন এবং গাড়ীটি বগুড়ায় নিজ গ্যারেজেই রাখতেন এবং মাঝে মাঝে বেশীর ভাগ সময় আবার গাড়িটি ভাড়াও দিতেন । কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অত্র প্রতিষ্ঠানের হাইস গাড়ীটি প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য তৈলের বরাদ্দের টাকা দিয়ে বগুড়া হতে পীরগঞ্জ এবং পীরগঞ্জ হতে বগুড়ায় অনবরত যাওয়া আসা করেন স্ত্রী সন্তানসহ । অধ্যক্ষের গাড়ীর তেলের বাবদ কোন বরাদ্দ না থাকলেও, অ্যাসেট প্রকল্পের প্রশিক্ষনার্থীদের ব্যবহারিকের জন্য তৈলের বরাদ্দের টাকা দিয়ে তিনি ফ্যামিলি নিয়ে বগুড়া থেকে পীরগঞ্জে নিয়মিত যাওয়া আসা করেন । গত ৩১ডিসেম্বর ২৪ ইং তারিখে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো: মহিবুল ইসলাম কর্তৃক টিটিসির কোয়াটারে (থার্টিফাস্ট নাইটে) উপলক্ষে বগুড়া ও বিভিন্ন জায়গা থেকে বহিরাগত লোকজন নিয়ে এসে গভীর রাতে তিনি বিভিন্ন মজমার আসর বসান । ক্যাম্পাসের রেস্ট
হাউস, প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার ও প্রশিক্ষক কোয়ার্টারে বহিরাগত পুরুষ ও মহিলা নিয়ে ২দিন, ২রাত নাচ গানে ফুিৰ্ত হৈ চৈ ও অনৈতিক কার্যক্রম সহ বিভিন্ন কুকীর্তি তিনি করেন তিনি । এসব বিষয় সকলে অবগত হলেও চাকুরির ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পায় নি । অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মুখ খুলে চাজুরী খুয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল সার্ভিসিং ট্রেডের গেস্ট ট্রেইনার বিপুল রায়হান। অধ্যক্ষের এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটু প্রতিবাদ করায় আমাকে বিনা নোটিশে কাজ থেকে বের করে দিয়েছে । এমন ভুক্তভোগীর শিকার হয়েছেন ইন্সট্রাক্টর জিএম সুলতান নামের এক প্রশিক্ষক। তিনি বলেন অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠান নিজের মনে করে একের পর এক অনিয়ম করেই চলছে তার বিরুদ্ধে কিছু বললেই তাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে একক অধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজের একটা বাহিনী গড়ে তুলেছেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যেই কথা বলবে তাকেই অপদস্ত অপমানিত করে চাকুরী খেয়ে ফেলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন। তবে
এবিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মহিবুল হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রশিক্ষকদের দক্ষতা ও যোগ্যতা না থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এও স্বীকার করেছেন যে প্রতিষ্ঠানে তার স্ত্রীসহ তিনি নিজেই গান গেয়েছেন তবে সবাই আমার গেস্ট ছিলো কেউ বহিরাগত নয় । আর আমাকে নিয়ে দুএকজন হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগম বলেন, প্রতিষ্টানটির কোনো অনিয়মের তথ্য আমার কাছে আসলে আমি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, অত্র প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।