পীরগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের এইচএসসি’র ফরম ফিলাপেরেকর্ড ভঙ্গ!

১৩ মার্চ ২০২৫, বিকাল ৬:৫৩ সময়
Share Tweet Pin it
[পীরগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের এইচএসসি’র ফরম ফিলাপেরেকর্ড ভঙ্গ!]

শিক্ষার্থীরা কাঁদলেও মন গলছে না অধ্যক্ষের! লাভের পাল্লা ভারী করতেই ২/৩ বিষয়ের অকৃতকার্যদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা, বছরের পর বছর ধরে কলেজটিতে এই চিত্র পীরগঞ্জ উপজেলায় এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পুরণে বরাবরের মতো অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে পীরগঞ্জ মহাবিদ্যালয়! এবারে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা করে ফরম পুরণের টাকা নেয়া হচ্ছে। অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা এই মোটা অংকের টাকা দিয়ে ফরম করতে না পারায় তারা কাঁদছেন। তবুও কলেজটির ফরম ফিলাপ কমিটি কিংবা অধ্যক্ষের মন গলছে না। আবার যারা এইচএসসির টেষ্ট পরীক্ষায় ২/৩ বিষয়ে ফেল করেছে, তাদেরকে প্রতি বিষয়ে ১ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

জানা গেছে, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পীরগঞ্জ মহাবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার ৩০০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিবেন। এবারের ফরমফিলাপে বোর্ড নির্ধারিত ফি বিজ্ঞান বিভাগে ২ হাজার ৭৮৫ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ২ হাজার ২২৫ টাকা করে। কিন্তু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে তার উল্টো চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কলেজটির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া ফরম পুরনের শেষ দিন। এরপর আরও টাকা বেশি দিয়ে ফরম পুরন করতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষের চাপের কারণে ঈদুল ফিতরের আগে অসচ্ছল পরিবারের পক্ষে এতো টাকায় ফরম পুরন কার প্রায় অসম্ভব। শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা অনুনয়, বিনয় করলেও অধ্যক্ষের মন গলছে না। 

 

অতিরিক্ত টাকা নেয়ার ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ যুক্তি তুলে ধরে বিভিন্ন খাত উল্লেখ করে টাকা নিচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষাবোর্ডে একাধিকবার যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহনের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া অনেকেই পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করেছে এবং মাসিক বেতনও বাকী রাখায় টাকার পরিমাণ টা বেশি হয়েছে। তবে এটি দিতেই হবে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজটির কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নির্ধারিত ফি দিতেই তাঁদের কষ্ট হয়। সেখানে বাড়তি অর্থ দেওয়া এক প্রকার দুঃসাধ্য। কিন্তু বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি তারা আরও বলেন, কলেজে নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় আমরা কলেজে আসি আর ফিরে যাই। যে কারণে অবোধ্য একাধিক বিষয়ে অনেকেই ফেল করেছে। আর কলেজের স্যাররাও এই সু্যোগে প্রতি বিষয়ে ১ হাজার টাকা করে বেশি নিচ্ছে। 

 

ফরম পুরনের সাথে জড়িত কয়েকজন কর্মচারী নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, এত টাকা বহন করা অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু আমাদের করার কিছুই নেই। আমরা নির্দেশের গোলাম। 

 

অধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম কে তার মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফির বেশি টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 

উল্লেখ্য, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে পীরগঞ্জের জামতলা নামকস্থানে পীরগঞ্জ মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। এর আগে কলেজটি উপজেলার রায়পুর নামকস্থানে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সেখানে শিক্ষার ব্যবসা ভালো না হওয়ায় কলেজটির অধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম এবং তার বাবা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল হোসেন বিএসসি স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদেরকে ম্যানেজ করে বিগত ২০১৫ সালের আগষ্টে উপজেলা সদরের জামতলায় সরিয়ে আনেন। এরপর থেকেই প্রতিবছরই এইচএসসির ভর্তি, ফরম পুরণ, প্রবেশপত্র প্রদানে রমরমা বাণিজ্য করে অধ্যক্ষ লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে। শুধু তাই নয়, ২০২২ সালে কলেজটি এমপিওভুক্ত হলে অধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম তার কলেজের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ডোনেশনের নামে পুনরায় প্রায় ২ কোটি নিয়ে তবেই এমপিওভুক্ত করেন। অধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম প্রায় অর্ধকোটি টাকার টয়োটা কার গাড়ীতে চলাফেরা করেন। কলেজ ছাড়া তার আর কোন আয়ের বৈধ উৎস্য নেই। তার অনৈতিক বাণিজ্যের কবলে পড়েছে শত শত কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী। ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহেনুচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিত ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশ নিলেও তাদের অনেককেই পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখিয়ে অধ্যক্ষ তার লাভের টাকার পাল্লা ভারী করছেন।